কোনো সিস্টেম যখন এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় তখন অবস্থার এই পরিবর্তন দু'ভাবে সংঘটিত হতে পারে। যথা:
ধরা যাক, কোনো এক প্রক্রিয়ায় কোনো কার্যনির্বাহক বস্তু বিশেষ এক পরিবেশে এক অবস্থা থেকে পরিবর্তিত হয়ে অন্য অবস্থায় যাওয়ার সময় বস্তুটি দ্বারা কিছু তাপ শোষিত ও কিছু বাহ্যিক কাজ সম্পাদিত হলো। এখন এই প্রক্রিয়াকে সম্মুখবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করলে বস্তুটি যদি একই পরিবেশে বিপরীতমুখী প্রক্রিয়ায় আদি অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময় একই পরিমাণ তাপ বর্জন করে এবং বস্তুটির ওপর একই পরিমাণ বাহ্যিক কাজ করা হয়, তাহলে সমগ্র প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা যাবে।
উদাহরণ : ১. বরফ তাপ শোষণ করে পানিতে পরিণত হয়। আবার সেই পানি থেকে সমপরিমাণ তাপ অপসারণ করলে তা পুনরায় বরফে পরিণত হবে। এটি প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ।
২. স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে খুব ধীরে ধীরে কোনো স্প্রিং-এর দৈর্ঘ্য প্রসারণ বা সংকোচন প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার আর একটি উদাহরণ। যেহেতু সম্প্রসারণের সময় স্প্রিং-এর ওপর যে কাজ সম্পাদিত হয় সংকোচনের সময় স্প্রিংও সেই পরিমাণ কাজ সম্পাদন করে ।
প্রকৃতিতে যে সমস্ত পরিবর্তন বা রূপান্তর আপনাআপনি ঘটে সেগুলোকে বলা হয় স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন। স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনগুলোতে দেখা যায় যে, এগুলো সর্বদাই একটা নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত হয়। যেমন, তাপ উচ্চতর তাপমাত্রা থেকে নিম্নতর তাপমাত্রার দিকে সঞ্চালিত হয়। একটি জড়বস্তু সুযোগ পেলেই উঁচু থেকে নিচুতে পড়তে থাকে, অর্থাৎ বিভব শক্তি হ্রাস পায় । প্রকৃতিতে এসব ঘটনা কখনো স্বাভাবিকভাবে বিপরীত দিকে প্রত্যাবর্তন করে আদি অবস্থায় যায় না । নিম্ন তাপমাত্রা থেকে তাপ স্বেচ্ছায় উচ্চ তাপমাত্রায় যায় না। প্রকৃতিতে সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনই একমুখী এবং অপ্রত্যাবর্তী।
উদাহরণ : দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের জন্য যে তাপ সৃষ্টি হয় তা একটি অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া। কারণ ঘর্ষণের বিরুদ্ধে যে কাজ হয় তাই তাপে পরিণত হয় এবং ঐ তাপকে কোনোভাবেই কাজে রূপান্তরিত করা যায় না।
১। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া অতি ধীর প্রক্রিয়া। পক্ষান্তরে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া একটি দ্রুত প্রক্রিয়া।
২। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া কার্য নির্বাহী বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় কার্যনির্বাহী বস্তু
প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। ৩। অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও একমুখী প্রক্রিয়া কিন্তু প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত নয় ।
৪। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপগতীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। পক্ষান্তরে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপগতীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে না।
তাপশক্তিকে কাজে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থার। এই যান্ত্রিক ব্যবস্থাই তাপীয় বা তাপ ইঞ্জিন ।
ইঞ্জিন কোনো উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে তার খানিকটা কাজে রূপান্তরিত করবে। তাপের যেটুকু কাজে রূপান্তরিত করতে পারবে না সেটুকু পরিবেশে বিলিয়ে দেবে এবং পুনরায় উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করবে। যে উৎস থেকে ইঞ্জিন তাপ গ্রহণ করে তার তাপমাত্রা যে পরিবেশ বা সিস্টেম তাপ গ্রহণ করবে তার উষ্ণতার চেয়ে বেশি হতে হবে। অর্থাৎ ইঞ্জিনটি উচ্চতর তাপমাত্রার কোনো উৎস (source) থেকে তাপ গ্রহণ করে সেই তাপের খানিকটা কাজে পরিণত করে বাকিটা নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহক (sink) বা শীতল বস্তুতে ছেড়ে দিয়ে আদি অবস্থায় ফিরে আসে। ইঞ্জিন থেকে অবিরাম কাজ পাওয়ার জন্য এভাবে চক্র পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
ধরা যাক, কোনো কার্যনির্বাহী বস্তু (যেমন, পিস্টন লাগানো সিলিন্ডারে রাখা গ্যাস) T1, উচ্চতর তাপমাত্রার তাপ উৎস (চিত্র ১.৫) থেকে Q1 পরিমাণ তাপ শোষণ করে। এখন এই ইঞ্জিন থেকে কাজ পেতে হলে অর্থাৎ এই ইঞ্জিন দ্বারা তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্য উৎস থেকে শোষিত তাপের একটা অংশ নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহকে বর্জন করে শীতল হতে হবে যাতে পুনরায় উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করতে পারে। T2 নিম্নতর তাপমাত্রার তাপগ্রাহকে বর্জিত তাপের পরিমাণ Q2 হলে, ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপ শক্তির পরিমাণ W = Q1 - Q2
তাপ ইঞ্জিনের সাহায্যে তাপকে কাজে রূপান্তরিত করা হয়। বাস্তবে ব্যবহৃত ইঞ্জিন সমুদয় তাপকে কাজে রূপান্তরিত করতে পারে না। সাধারণভাবে দেখা যায় ইঞ্জিন খুব বেশি হলে সরবরাহকৃত তাপশক্তির শতকরা 25 ভাগ মাত্র কাজে রূপান্তরিত করতে পারে। ফরাসি প্রকৌশলী সাদী কার্নো সকল দোষত্রুটি মুক্ত একটি আদর্শ ইঞ্জিনের পরিকল্পনা করেন যা কার্নো ইঞ্জিন নামে পরিচিত।
কার্নো ইঞ্জিন একটি আদর্শ ইঞ্জিনের ধারণামাত্র, বাস্তবে এর রূপান্তর সম্ভব হয়নি। ১.৬ চিত্রে একটি কার্নো ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে।
একটি সিলিন্ডার যার দেয়াল সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থ এবং তলদেশ সম্পূর্ণ তাপ পরিবাহী পদার্থ দ্বারা তৈরি। এর ভেতরে সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থে তৈরি একটি পিস্টন P ঘর্ষণহীনভাবে চলাচল করতে পারে। সিলিন্ডারের মধ্যে কার্যনির্বাহক বস্তু হিসেবে আদর্শ গ্যাস নেয়া হয়।
উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট একটি উত্তপ্ত বস্তু যা T1 তাপমাত্রায় আছে এবং তাপের উৎস হিসেবে কাজ করে । এর তাপমাত্রা সর্বদা স্থির থাকে, তাপের আদান প্রদানে কখনো পরিবর্তন হয় না।
উচ্চ তাপ ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট T2 তাপমাত্রার শীতল বস্তু যা তাপগ্রাহক হিসেবে কাজ করে। এর তাপমাত্রাও সর্বদা স্থির থাকে, তাপের আদান প্রদানে কোনো পরিবর্তন হয় না ।
সম্পূর্ণ তাপ অন্তরক পদার্থের তৈরি একটি আসন যার উপর সিলিন্ডারটি বসানো থাকে ।
আরও দেখুন...